ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে এক নারী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রতারণামূলকভাবে বিয়ে করে আর্থিক সুবিধা বাগিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রবিবার (২৩ জুন) সকাল ১০টার দিকে উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এমনই অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী মো. ইয়াসিন বিশ্বাস।
ইয়াসিন ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার গুনবহা ইউনিয়নের হরিহরনগর গ্রামের মো. মনিরুদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মো. ইয়াসিন বিশ্বাস বলেন, একই গ্রামের মো. সোবহান বিশ্বাসের সর্দারের মেয়ে তাহেরা খাতুন (১৯) একজন প্রতারক ও অর্থলোভী নারী। বিভিন্ন সময়ে ওই নারী একাধিক ব্যক্তিকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রতারণামূলকভাবে বিয়ে করে আর্থিক সুযোগ সুবিধা বাগিয়ে নিয়ে অনেককে নি:স্ব করেছে। ইতোপূর্বে তাহেরা একই ইউনিয়নের নদীয়ারচাঁদ গ্রামের মঈনুদ্দিন শেখের ছেলে আলামিনকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে নিজ বাড়িতে ডেকে নিয়ে সম্ভ্রমহানির কথা উল্লেখ করে স্থানীয় লোকজন জড়ো করে তাকে জোরপূর্বক বিয়ে করে। পরবর্তীতে তার কাছ থেকে নানাবিধ আর্থিক সুবিধা বাগিয়ে নিয়ে তিন মাসের মাথায় দেনমোহরের টাকা নিতে তাকে ডিভোর্স দিতে বাধ্য করে। কিছুদিন আগে বিয়ের দাবিতে প্রতিবেশী মকরব ফকিরের ছেলে ইব্রাহিম ফকিরের বাড়িতে অবস্থান করে তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। এছাড়া আরো বেশ কিছু ছেলের সাথে তাহেরা ও তার পরিবার এভাবে প্রতারণা করে নগদ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে ইয়াসিন বিশ্বাস আরো বলেন, আমি ঢাকা থেকে ঈদের ছুটিতে বাড়িতে এলে বৃহস্পতিবার (২০ জুন) রাতে তাহেরা খাতুন আমাকে ফোন দিয়ে জানায়, তার বাবা অসুস্থ। তাকে হাসপাতালে নিতে হবে। আমি সরল বিশ্বাসে একজন অসুস্থ মানুষের সেবার অভিপ্রায়ে ওই বাড়িতে গেলে পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাদের পরিবারের লোকজন আমাকে জোরপূর্বক ঘরের মধ্যে আটকে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দেয়। এ ঘটনার সাথে তাহেরার আত্মীয় খায়রুল মোল্যা, ছোট চাচা সিফাত সরদার, আরেক চাচা ইসারত সরদার, সোবহান সরদার জড়িত বলে সংবাদ সম্মেলনে ইয়াসিন উল্লেখ করেন। ইয়াসিন আরও বলেন, পরে স্থানীয় লোকজনকে ডেকে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে সাড়ে চার লাখ টাকা দেনমোহরে জোরপূর্বক তাহেরার সাথে উল্লিখিত ব্যক্তিরা আমার বিয়ে দিয়ে দেয়। এভাবে মানুষকে ফাঁদে ফেলে মানুষের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নেয়া এই পরিবারের ব্যবসা।
এই প্রতারক চক্রকে আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মো. ইয়াসিন বিশ্বাসের পিতা জমিরুদ্দিন বিশ্বাস, ভাই মো. ফারুক বিশ্বাস ।
জানতে চাইলে কাবিন রেজিস্ট্রার হাবিবুল্লাহ বাহার বলেন, বিয়েতে উভয় পক্ষের স্বাক্ষী ছিলো এবং ছেলে-মেয়ে উভয়েই কাবিননামায় স্বাক্ষর করায় বিয়ে পড়িয়েছি।
অভিযুক্ত তাহেরা খাতুনের মোবাইল নম্বরে একাধিক বার ফোন করার পর এক নারী ফোন রিসিভ করে সাংবাদিক পরিচয় জেনে, তাহেরা বাড়িতে নেই বলে জানান, এ সময় তাকে অভিযোগের বিষয়ে অবিহিত করা হলে সে তাহেরা বাড়িতে এলে আপনাদের সাথে কথা বলবে বলে কল কেটে দেন।
এ ব্যাপারে তাহেরার আত্মীয় খায়রুল মোল্যার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করলেও অপর প্রান্ত থেকে সাড়া না দেওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে গুনবহা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড মেম্বার আলমগীর বিশ্বাস বলেন, ঘটনা সত্য, খবর শুনে তাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম, এর আগেও এই মেয়ে একাধিক ছেলেকে ট্যাপে ফেলে আর্থিক সুবিধা বাগিয়ে নিয়েছে যার অনেক অভিযোগ পেয়েছি। এটা তাদের ব্যবসা।
⇒ আরও পড়ুনঃ বোয়ালমারীতে ট্রাকের সংঘর্ষে মোটরসাইকেল চালক নিহত
জানতে চাইলে গুনবহা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমি শুনেছি ছেলেটা বিয়েতে রাজি নয়, তাকে আটকিয়ে জোরপূর্বক বিয়ে দিয়েছে। বিয়েতে ছেলের অভিভাবকরাও কেউ উপস্থিত ছিলেন না।
ইয়াসিন বিশ্বাস জানান, প্রত্যারণার অভিযোগ এনে তাহেরা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে থানায় মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।