ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে এনটিআরসিএ শিক্ষক নিবন্ধনে তথ্য গোপন করে ইনডেক্স ধারি কারিগরি স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষক মাধ্যমিক স্কুলে শরীরচর্চা পদে নিয়োগ পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এনটিআরসিএ তথ্য গোপন করে মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ পাওয়া শরীরচর্চা শিক্ষক মো. জাফর মোল্যা। তিনি বর্তমানে ময়না আনন্দ চন্দ্র বোস ইনস্টিটিউশন নামের মাধ্যমিক স্কুলে শরীর চর্চা পদে নিয়োগ পেয়েছেন।
দীর্ঘদিন এই প্রতিবেদক অনুসন্ধান করে তার একটি শিক্ষক নিবন্ধন সার্টিফিকেট হাতে পান। সার্টিফিকেটে উল্লেখ রয়েছে তিনি মাধ্যমিক কারিগরি স্কুল, ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট স্কুল ও মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতে পারবেন। তবে মাধ্যমিক পর্যায় স্কুলে তিনি শিক্ষকতা করতে পারবেন না। তবুও তিনি কিভাবে মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষক পদে নিয়োগ পেলেন। এ নিয়ে নানা মনে প্রশ্ন উঠেছে। জানা গেছে, ওই শিক্ষক মুন্সগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলার সিদ্দিক আকবার দাখিল মাদ্রাসায় চাকরি করতেন। সেখানে শিক্ষকতা করা কালিন সময়ে এমপিও ভুক্ত হয়ে তাঁর ইনডেক্স নাম্বার পড়ে যায়। ইনডেক্স নাম্বার হলো M0034831.। তবে এনটিআরসি শিক্ষক নিবন্ধনের ১৩ নং ক্রমিকে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে; এমপিও ভুক্ত প্রার্থীর একটি পর্যায়ে ( স্কুল/কলেজ) একাধিক পদে শিক্ষক নিবন্ধন সনদ থাকলে উক্ত প্রার্থী ঐ পর্যায় আবেদন করতে পারবেনা। তার পরেও তিনি আবেদন করেছেন।
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ১৪ নং ক্রমিকে বলা হয়েছে; যদি কোন প্রার্থী কোন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরি (এমপিও ভূক্ত) হওয়া সত্ত্বেও তথ্য গোপন করে আবেদন করে নির্বাচিত হন। তবে তার নির্বাচন বাতিল করা হবে, এবং তার বিদ্যমান এমপিও বাতিলের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে। তার পরেও তার সে নিয়োগ বেশ তরবিয়তে রয়েছে।
শিক্ষক মো. জাফর মোল্যা বলেন, আমি নিয়ম অনুযায়ী আবেদন করেছি। তাই আমি নির্বাচিত হয়েছি। এখানে কোন তথ্য গোপন করা হয়নি। তাঁর এনটিআরসিএ’র সার্টিফিকেট সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি সার্টিফিকেট দেখাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তাঁর একাধিক এনটিআরসি শিক্ষক নিবন্ধ আছে স্বীকার করে তিনি বলেন, আমার জেনারেল লাইনেও এনটিআরসির ম্যানেজমেন্ট ও একাউন্টিংয়ে শিক্ষক নিবন্ধনের সার্টিফিকেট আছে। তবে আমি মেধায় টিকবোনা বিধায় স্কুলে আবেদন করিনি। এজন্য আমি বিপিএডি করছি। তিনি আরও বলোন, এক জনের একাধিক সার্টিফিকেট থাকতেই পারে। সে আবেদনও করতে পারে। তাতে সমস্যা কি?
তবে তাঁর দাবী কারিগরি মাদ্রাসায় এমপিও হওয়া ও ইনডেক্স নাম্বর পড়ার আগে এনটিআরসিএ আবেদন করে মাধ্যমিক স্কুলে নির্বাচিত হয়েছেন।
ময়না স্কুলের শিক্ষক মখলেসুর রহমান অরুণ বলেন, বিষয়টা আমার জানা ছিলনা। আপনার মাধ্যমে জানতে পেড়েছি। তার সার্টিফিকেটে সমস্যা থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বোয়ালমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, “এতো সেনসিটিভ বিষয় আমাদের বক্তব্য না নেয়ায় বেটার”! আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়ে দিয়েছি। এটা আবার যাচাই বাছাই হবে। ভালো হোক মন্দ হোক আমাদের পাঠাতে হবে। তবে কমিটমেন্ট করে পাঠাতে হয়। বাতিল করার দায়ীত্ব আমাদের না। এটা ডিজির দায়ীত্ব। তাঁর যে সার্টিফিকেট রয়েছে তাতে তিনি মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষকতার আবেদন করেতে পারেন না। এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এই সার্টিফিকেট সম্পর্কে আমার জানা ছিল না। আমরা ওই শিক্ষকের কাগজপত্র পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। আবার কাগজপত্র ফিরিয়ে আনা হয়েছে। অধিক যাচাই বাছাই করে তার কোন ট্রুটি থাকলে সেভাবে লিখে উর্ধ্বতণ কতৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মাধ্যমিক জেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি ইস্রাফিল মোল্যা বলেন, সার্টিফিকেট না থাকালে বা গোপন করে কেউ আবেদন করলে সেটা বাতিল হওয়ার কথা। আবার কোন শিক্ষক যদি অন্যকোন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করে, এবং ইনডেক্স নাম্বার চলে আসে তাহলে বিধি অনুযায়ী তার দু স্থানের চাকরি বাতিল হতে পারে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন বলেন, বিষয়টা আমার জানা নেই। তবে অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।