রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলের হাট-বাজারে শীতকালীন শস্যবীজের চাহিদা বাড়লেও সাম্প্রতিক বন্যা এবং নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতায় শস্যবীজের দাম বেড়ে গেছে। এতে বিপাকে পড়েছে কৃষকরা। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আসন্ন শীতকালীন মৌসুমে শাক-সবজির আবাদ কমে যাওয়ার পাশাপাশি উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বর্ষা মৌসুমের শেষে শীতকালীন মৌসুমের মসলাসহ বিভিন্ন শস্যের চাহিদা বেড়েছে, কিন্তু দেশে আমদানি সংকটের কারণে শস্যবীজের সরবরাহ কমে গেছে।
চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাঁচটি জেলা ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের বন্যায় কৃষকদের নিজস্ব বীজভাণ্ডার নষ্ট হয়ে যাওয়ায় রবি মৌসুমের শুরুতেই প্রায় সব ধরনের শস্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। এর মধ্যে ধান, সরিষা, ধনিয়া, কালিজিরা, মরিচ, বাদাম ও ডালজাতীয় শস্যবীজের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। কৃষি বিভাগ এবং বাজার সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতিদিনই শস্যবীজের দাম লাফিয়ে বাড়ছে। উদাহরণস্বরূপ, ১০ দিন আগে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি সরিষা বীজ বিক্রি হয়েছিল ৮০-৮৩ টাকায়, কিন্তু এখন তা প্রায় ১০০ টাকায় পৌঁছেছে। অন্যদিকে, সপ্তাহখানেকের ব্যবধানে বাদামের দাম কেজিপ্রতি ৪-৬ টাকা বেড়ে ১৪০-১৪২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, মরিচ ৩৫-৪০ টাকা বেড়ে ১৮০-১৮৫ টাকায়, ধনিয়া ৩৫ টাকা বেড়ে ৯৫ টাকায়, এবং কালিজিরা ১৫-২০ টাকা বেড়ে ৩৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারি বাজারে বাড়তি চাহিদার কারণে এসব শস্যের দাম বেড়েছে। কৃষকরা সাধারণত রবি মৌসুমে সরিষা, মরিচ, বাদাম, ধনিয়া, হলুদ, ভুট্টা, গম, সয়াবিন, তিল, তিসি, সূর্যমুখী, মসুর, ছোলা, বার্লি, মাষকলাই, মুগ, খেসারি, ফেলন, মটর, অড়হরসহ নানা শস্য রোপণ করেন। অধিকাংশ শস্যের বীজ কৃষকরা নিজেই মজুদ করে রাখেন, তবে পাইকারি বাজারে কিছু শস্যের বীজ লেনদেন হয়।
এবার বন্যা, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও পূজার ছুটির কারণে আমদানি প্রক্রিয়ায় ধীরগতি থাকায় দেশজুড়ে শস্যবীজের সংকট তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শস্য ভারত থেকেই আমদানি করা হয়। যদিও বর্তমানে আমদানি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তবে সরবরাহ স্বাভাবিক হতে কিছু সময় লাগবে।
এদিকে, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার ৪৬টি উপজেলায় অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে কৃষকদের ক্ষতি হয়েছে। কৃষি বিভাগ শীতকালীন সবজি উৎপাদনের জন্য প্রণোদনা ও বীজ সরবরাহ করছে। এর মধ্যে বোরো বীজের জন্য ১০ কোটি ৮৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং শীতকালীন সবজি বীজ ও নগদ সহায়তার জন্য ১৪ কোটি ১ লাখ ১৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
কৃষি কর্মকর্তারা মনে করছেন, বীজের দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে, যার ফলে চাষের পরিমাণ কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাজারে বীজের দাম বাড়লে কৃষকের উৎপাদন খরচ বাড়ে, আর বেশি দাম হলে চাষের আগ্রহ কমে যায়। তবে বীজের সরবরাহ সংকট সবচেয়ে মারাত্মক, কারণ উচ্চ দাম সত্ত্বেও কৃষক যদি সময়মতো বীজ না পায়, তবে চাষাবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।
কৃষি বিভাগ এবং বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, শস্যবীজের সরবরাহে সংকট দূর করার জন্য সরকারি প্রণোদনা ও বীজ সরবরাহ আরও বাড়ানো উচিত। বিশেষত রবি মৌসুমের আগে কৃষকদের বীজ ও সারের জন্য বাড়তি সহায়তা প্রয়োজন। শস্যবীজের দাম বেড়ে যাওয়ার পরও সরকারিভাবে সহায়তা না পেলে আগামী মৌসুমে রবিশস্য উৎপাদন কমে যেতে পারে, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।